বাংলার সন্ন্যাসী বিদ্রোহ
বাংলার সন্ন্যাসী বিদ্রোহ (1770-1820 খৃ: )
⊕ হিন্দু নাগ ও গিরি সন্ন্যাসীরা এক সময় বাংলা ও অযোধ্যার নবাব এবং মারাঠা ও রাজপুত সর্দারদের অধীনে সৈন্যদলে কাজ করতেন।
⊕ সন্ন্যাসীরা সশস্ত্র অবস্থায় ঘোরাফেরা করতেন।
⊕ সন্ন্যাসী বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল বিভিন্ন পবিত্র স্থানে তীর্থ করার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ কর্তৃক বিধিনিষেধ আরোপ।
⊕ সন্ন্যাসীরা শহরগুলি থেকে ভিক্ষা সংগ্রহ করেন ও ব্রিটিশদের বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে লুঠপাট চালান। এর ফলে ব্রিটিশদের সঙ্গে তাদের সংঘাত বাধে এবং তারা সংগঠিতভাবে ব্রিটিশ সৈনিকদের সঙ্গে লড়াই করেন।
⊕ প্রায় অর্ধ শতক ধরে চলার পর 1820 খৃঃ নাগাদ সন্ন্যাসী বিদ্রোহ স্তিমিত হয়ে পড়ে।
⊕ বঙ্কিমচন্দ্রের “আনন্দমঠ” উপন্যাসে এই বিদ্রোহের পরিচয় পাওয়া যায়।
⊕ ফকির এবং সন্ন্যাসীরা উভয়েই ছিলেন ভিক্ষাজীবী। কোম্পানির কর্মচারীরা এদেশের ধর্মীয় আচার-আচরণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না বলে সন্ন্যাসী বা ফকিরদের ভিক্ষা সংগ্রহকে তারা জোরপূর্বক তোলা আদায় বলে মনে করেন। ফলে কোম্পানির সরকার দলবদ্ধ অবস্থায় ফকির এবং সন্ন্যাসীদের ভিক্ষা করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
⊕ ফকির এবং সন্ন্যাসী উভয়েই কিছু নিঃশুল্ক জমি ভোগ করতেন। কিন্তু ব্রিটিশ শাসন শুরু হওয়ার পর তাঁরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। এই কারণে উভয়েই ফিরিঙ্গি শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই আরম্ভ করেন।
⊕ সাধারণ কৃষক শ্রেণি সন্ন্যাসী-ফকিরদের বিদ্রোহের প্রতি সমর্থন জানান; কেননা, ব্রিটিশদের নতুন রাজস্বনীতির ফলে কৃষকেরা যথেচ্ছভাবে শোষিত হতেন।
⊕ 1769 – 70 খৃষ্টাব্দের দুর্ভিক্ষ দৈন্যতাগ্রস্ত কৃষকদের অবস্থা চূড়ান্তভাবে শোচনীয় করে তোলে। আর এই দুর্ভিক্ষের কারণ যেহেতু ব্রিটিশদের রাজস্বনীতি তথা জমিদারদের যথেচ্ছ শোষণ, কাজেই কৃষকেরা ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহকে স্বাগত জানান।
⊕ সন্ন্যাসীরা 1773 খৃঃ এবং আরও কয়েকবার ব্রিটিশ সৈন্যদের পরাজিত করে একটি দুর্দমনীয় শক্তিরূপে আত্মপ্রকাশ করেন।
⊕ ওয়ারেন হেস্টিংস সন্ন্যাসী বিদ্রোহকে হিন্দুস্থানের যাযাবরদের পেশাদারি উপদ্রব, দস্যুবৃত্তি ও ডাকাতি বলে অভিহিত করেন।
⊕ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “আনন্দমঠ” গ্রন্থে সন্ন্যাসী বিদ্রোহের বর্ণনা পাওয়া যায় । স্বদেশী আন্দোলনের সময় জাতীয় সঙ্গীতরূপে গাওয়া “বন্দে মাতরম্” গানটিও আনন্দমঠ থেকে নেওয়া।