Ancient-Indiaপ্রাক-মৌর্য-যুগমগধ

মগধের উত্থান, প্রাক্‌-মৌর্য যুগ, বিম্বিসার থেকে ধননন্দ, PDF

মগধের উত্থান, প্রাক্‌-মৌর্য যুগ, বিম্বিসার থেকে ধননন্দ, PDF

মগধের উত্থান, প্রাক্‌-মৌর্য যুগ, বিম্বিসার থেকে ধননন্দ, PDF

মগধের উত্থান, প্রাক্‌-মৌর্য যুগ

মগধ (Magadha)

  • বিহারের গয়া এবং পাটনা অঞ্চল নিয়ে এই মহাজনপদটি গড়ে উঠেছিল।
  • মগধের উত্তরে ছিল গঙ্গা নদী, দক্ষিণে বিন্ধ্যপর্বত, পূর্বে চম্পা এবং পশ্চিমে সোন নদী।
  • মহাভারত ও পুরাণের মতে, মগধের প্রাচীনতম রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জরাসন্ধের পিতা বৃহদ্রথ।
  • প্রথম দিকে মগধের রাজধানী ছিল গিরিব্রজ। গিরিব্রজ কথাটির অর্থ হলো পার্বত্য দুর্গ শহর।
  • মহাভারতে গিরিব্রজকে আরও কয়েকটি নামে ডাকা হয়েছে-রাজগৃহ, বরহদ্রথপুর, মগধপুর ইত্যাদি। রামায়ণে একে বসুমতী বলা হয়েছে।
  • হিউয়েন-সাঙ রাজগৃহকে বলেছেন কুশাগ্রপুর। বুদ্ধঘোষ রাজগৃহ নগরীকে বিম্বিসার পুরী বলে উল্লেখ করেছেন।
  • মগধের প্রথম দুজন শাসক ছিলেন রাজা সমুদ্রবিজয় এবং গয়া।

বিম্বিসার (544-492 খ্রি. পূ.) শ্রেণিক উপাধি

  • হর্ষঙ্ক বংশের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শাসক ছিলেন বিম্বিসার। তাঁর পিতার নাম ছিল ভট্টিয়া।
  • বিম্বিসার চিকিৎসক জীবককে পাঠিয়েছিলেন অবন্তীরাজের কামলা রোগ (জন্ডিস) সারাবার জন্য।
  • তক্ষশিলার রাজা পুস্করসারিন বিম্বিসারের নিকট দূত প্রেরণ করেন।
  • বিম্বিসার অঙ্গ আক্রমণ করে ব্রহ্মদত্তকে পরাজিত করেন তথা অঙ্গ-কে মগধের অন্তর্ভুক্ত করেন। কাশীর একটা অংশকেও তিনি মগধের অধীনে আনেন।
  • বিম্বিসারের সেনিয়া (Seniya) নামটি থেকে বোঝা যায় যে, শাসক হিসেবে সর্বপ্রথম তাঁরই একটি স্থায়ী সৈন্যদল ছিল।
  • তাঁকে শ্রেণিক নামেও অভিহিত করা হয়।
  • কুশাগ্রপুর শহরটি আগুনে দগ্ধ হয়ে গেলে বিম্বিসার রাজগৃহ নামক রাজধানী শহরটি প্রতিষ্ঠা করেন।
  • চারটি রাজ্যের রাজপরিবার বিম্বিসারের হাতে কন্যাদান করার মধ্যে দিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল—খেমা (মদ্র রাজকন্যা), কোশলাদেবী (কোশল রাজকন্যা), বিদেহী বাসাহি (বিদেহ রাজকন্যা) এবং চেল্লনা (লিচ্ছবি রাজকন্যা)।
  • খেমা ছিলেন প্রধানা রানি (রাজমহিষী)।
  • বিম্বিসার ছিলেন গৌতম বুদ্ধের একজন প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
  • করণ্ড বেনুবন নামক একটি বাঁশবন তিনি বৌদ্ধসংঘকে দান করেন।
  • বিম্বিসারের সন্তানগণ হলেন : পুত্র-অজাতশত্র, অভয়, বিমল কোণ্ডজ্ঞ, হল্প, বেহল, কাল, শিলাবত, জয়সেন প্রমুখ; কন্যা-চুণ্ডি।
  • জৈন গ্রন্থাদি (যেমন : উত্তরধ্যয়ন সূত্র) থেকে জানা যায় যে, বিম্বিসার ছিলেন মহাবীরের একজন উল্লেখযোগ্য ভক্ত।

অজাতশত্রু (493-459 খ্রি. পূ.) কুনিক উপাধি

  • বিম্বিসারের পুত্র অজাতশত্রুর অপর দুটি নাম হলো কুণিক এবং অশোকচণ্ডা।
  • পিতা বিম্বিসারকে তিনি বন্দি করে রেখে অনাহারে মরতে বাধ্য করেন। জৈন গ্রন্থাদি থেকে জানা যায় যে, পুত্রের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য বিম্বিসার বিষ পান করে আত্মহত্যা করেন। স্বামীর এমন নিষ্ঠুর মৃত্যুর যন্ত্রণায় আহত হয়ে কোশলাদেবীও মারা যান।
  • তিনি প্রসেনজিতের কন্যা বজিরাকে বিবাহ করেন।
  • অজাতশত্রু প্রসেনজিতের মৃত্যুর পর কোশলরাজ্যকে তিনি মগধের অন্তর্ভুক্ত করেন।
  • তিনি লিচ্ছবিদের সঙ্গে দীর্ঘ 16 বছর যুদ্ধ করে তাদের রাজ্যটি মগধের অধীনে আনতে সক্ষম হন।
  • অজাতশত্রু 32 বছর রাজত্ব করেন।
  • তাঁর রাজত্বকালে মহাবীর, বুদ্ধ এবং গোসাল মাসকারিপুত্র নির্বাণ লাভ করেন।
  • লিচ্ছবিদের সঙ্গে যুদ্ধের সময় তিনি বড় বড় পাথর ছুঁড়ে মারার একটি যন্ত্র (মহাশিলাকান্তক) এবং একটি বিধ্বংসী রথ (রথমুশল) ব্যবহার করেছিলেন।
  • ৪৮৩ খ্রি. পূ. অজাতশত্রুর পৃষ্ঠপোষকতায় রাজগৃহে প্রথম বৌদ্ধসংগীতি মহাসম্মেলন আহূত হয়।

উদয়ী (459-444 খ্রি. পূ.)

  • উদয়ী বা উদয়ীভদ্র 459 খ্রি. পূ. নাগাদ মগধের সিংহাসনে বসেন।
  • রাজা হওয়ার পূর্বে তিনি ছিলেন পিতার অধীনে চম্পার রাজপ্রতিনিধি (viceroy)।
  • তিনি কুসুমপুর বা পাটলিপুত্র শহরটি প্রতিষ্ঠা করেন।
  • অবন্তীর রাজা প্রদ্যুতের সঙ্গে তিনি যুদ্ধে অবতীর্ণ হন।

পরবর্তী শাসকগণ

  • উদয়ীর পর নন্দীবর্মণ, মহানন্দী, অনুরুদ্ধ, মুন্দ্র এবং নাগদশক মগধের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন (যদিও এ বিষয়ে বিভিন্নরকম মতবাদ রয়েছে)।
  • এঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন পিতৃহন্তা। তাই মগধের ক্রুদ্ধ নাগরিকগণ হর্ষঙ্ক বংশের শাসন উচ্ছেদ করে শিশুনাগ (412-349 খ্রি. পূ.) নামক একজন অমাত্যকে সিংহাসনে বসান।
  • রাজা হওয়ার পূর্বে শিশুনাগ ছিলেন বারাণসীর রাজ প্রতিনিধি। তিনি অবন্তীরাজ্যকে মগধের অন্তর্ভুক্ত করেন।

কালাশোক (349-366 খ্রি. পূ.)

  • শিশুনাগের পর মগধের সিংহাসনে বসেন। কালাশোক বা কাকবর্ণ।
  • কাকবর্ণ তাঁর রাজধানী গিরিব্রজ থেকে স্থায়িভাবে পাটলিপুত্রে স্থানান্তরিত করেন।
  • মাঝে মাঝে বৈশালী নগরকেও রাজধানী হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
  • বাণভট্টের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, কালাশোক গলায় ছুরি বিদ্ধ করে মৃত্যুবরণ করেন।
  • কালাশোকের পর তাঁর দশজন পুত্র ক্রমান্বয়ে শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
  • তাঁর শাসনকালে ৩৮৩ খ্রি পূ বৌদ্ধদের দ্বিতীয় মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় (বৈশালীতে)।
  • শিশুনাগ বংশের সর্বশেষ শাসক ছিলেন মহানন্দী।

নন্দবংশ

  • খ্রি. পূ. 344 অব্দে মহাপদ্ম নন্দ শিশুনাগ বংশের উৎখাত ঘটিয়ে মগধে নন্দ বংশের শাসন কায়েম করেন।
  • পালি গ্রন্থাদিতে মহাপদ্মকে উগ্রসেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর অধীনে বিশাল একটি সৈন্যবাহিনী ছিল।
  • পুরাণের মতে, মহাপদ্ম ক্ষত্রিয়দের ধ্বংস করেন। নিজেকে তিনি একরাট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ইক্ষাকু, পাঞ্চাল, কাশী, মৈথিল, সুরসেন, হৈহয়, কলিঙ্গ, অস্মক, কুরু প্রভৃতি রাজবংশকে পদানত করেন।
  • মহাপদ্ম কলিঙ্গে একটি সেচখাল নির্মাণ করেন।
  • নন্দ বংশের রাজা ছিলেন মোট নয় জন।
  • এই বংশের শেষ শাসক ছিলেন ধননন্দ।
  • ধননন্দকে আগ্রামিস (Agrames) বলা হয়। তিনি ছিলেন জৈন ধর্মাবলম্বী। তাঁর প্রচুর স্বর্ণমুদ্রা ছিল।
  • নন্দদের শাসনকাল শেষ হয় 324-23 খ্রিস্ট পূর্বাব্দে।

মগধের প্রাধান্য বিস্তারের কারণ

  1. রাজগৃহ এবং পাটলিপুত্র-দুটি নগরই ছিল পাহাড়, দুর্গ ও নদী দ্বারা সুরক্ষিত।
  2. সমগ্র মগধ রাজ্যটিও গঙ্গা, গণ্ডক, ঘাঘর এবং সোন নদী দ্বারা বেষ্টিত তথা সুরক্ষিত ছিল।
  3. নদীগুলি সুরক্ষাদানের পাশাপাশি বাণিজ্যিক যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো।
  4. রাজগৃহের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিতে জলসেচের ব্যবস্থা এবং পশুচারণ ভূমি থাকায় ফসল উৎপাদন ও পশুপালনের উন্নতি ঘটেছিল।
  5. মগধে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য ছিল।
  6. উর্বর জমি উদ্বৃত্ত ফসলের যোগান দিত।
  7. কটবর্তী অরণ্য থেকে ঘরবাড়ি, সেতু ইত্যাদি নির্মাণের জন্য কাঠ এবং যুদ্ধের জন্য হাতি সংগ্রহের ব্যবস্থা ছিল।
  8. মগধে লৌহ আকরিকের প্রাচুর্য ছিল (বর্তমান ঝাড়খণ্ড অঞ্চলে)।
  9. লোহার যন্ত্রপাতি ও যুদ্ধাস্ত্র একইসঙ্গে জঙ্গল পরিষ্কার, চাষবাস এবং যুদ্ধের ক্ষেত্রে মগধের অধিবাসীদেরকে বাড়তি সুবিধা দান করেছিল।
  10. লোহা এবং লোহার জিনিসপত্র বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হতো।
  11. তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় ব্রাহ্মণদের প্রাধান্য কমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সহায়তা করার অবকাশ পেয়েছিলেন।

 


প্রাচীন ভারত আরো গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি লেখা

Download Details
———————————————————-

File Name : Test

File Type : Test

File Size : Test

File Source : Test

File Link : Test
———————————————————-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *