পশ্চিমবঙ্গের বিদ্রোহ ও তাদের পরিচয় revolt-of-west-bengal

পশ্চিমবঙ্গের বিদ্রোহ ও তাদের পরিচয়

[১] ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ

১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ ভারতের প্রথম বৃহৎ বিদ্রোহ যদিও তা ব্যর্থ হয়েছিল। প্রথম এই বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল ব্যারাকপুরের সেনানিবাসে। সেসময় এনফিলদ রাইফেলের গুজবে ভারতীয় সেনানিবাসে যে বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাঁর ফলশ্রুতি ছিল মহাবিদ্রোহ। ওই বছর ব্যারাকপুরের সেনা মঙ্গল পান্ডে ব্রিটিশদের হাতে শহীদ হন। 

[২] বঙ্গবিচ্ছেদ বা বাংলা ভাগ

লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালে বাংলা ভাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তে স্বাভাবিকভাবেই সেইসময় বাঙালিরা এর সমর্থন জানায়নি। বঙ্গভঙ্গের কারণ হিসেবে ব্রিটিশদের বক্তব্য ছিল, তাদের এই অঞ্চলের শাসন পরিচালনা অনেক কষ্টকর।

এর ফলে বাংলায় বৃহৎ আন্দোলনের সুচনা হয় যা ‘বঙ্গভঙ্গবিরোধী’ আন্দোলন নামে অভিহিত হয়। স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। তাঁর লেখা গান এসময় আন্দোলনকারীদের প্রেরণা জুগিয়েছিল। তাঁর “বাংলার মাটি বাংলার জল” কিংবা “ও আমার দেশের মাটি” গানগুলি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল।

১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ঠিকই কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে কলকাতা থেকে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

[৩] চুয়াড় বিদ্রোহ

১৯৯৮-৯৯ সালে এই চুয়াড় বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল। মেদিনীপুরের চুয়াড় অঞ্চলে ব্রিটিশ ও মহাজনদের বিরুদ্ধে চুয়াড়রা এই বিদ্রোহ করে। নেতা ছিলেন দুর্জন সিংহ। দুর্জন সিংহের নেতৃত্বে তারা রায়পুর পরগণায় নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করেছিল। যদিও ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে এদের পরাজয় হয়।

[৪] সাঁওতাল বিদ্রোহ

১৮৫৫ সালে সাঁওতাল বিদ্রোহ বা হুল শুরু হয়, মানভূম, ছোটনাগপুর, পালামৌ, প্রভৃতি অঞ্চলে সাঁওতাল-রা বসবাস  করত। কিন্তু ব্রিটিশ ও মহাজনদের শোষণ-অত্যাচারের বিরুদ্ধে তারা বিদ্রোহে অংশ নেয়। এদের নেতা ছিলেন সিধু এবং কানহু। 

দিকু অর্থাৎ বহিরাগতদের থেকে নিজেদের বাঁচাতে এরা বিদ্রোহ করলেও এদের বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটে সিধু ও কানুর মৃত্যুর পর। যদিও ব্রিটিশ সরকার সাঁওতালদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া মেনে নিয়েছিলেন, যেমন– সাঁওতাল পরগনা গঠন।

[৫] নীল বিদ্রোহ

এটি একটি কৃষক বিদ্রোহ, সংঘটিত হয় ১৮৫৯ সালে। নীলচাষিদের অত্যাচারের প্রতিবাদ ছিল এই বিদ্রোহ। বর্ধ্মান, বাঁকুড়া, বীরভূম প্রভৃতি অঞ্চলে বিপুল পরিমানে নীলচাষ হত। কিন্তু নীলকরদের অত্যাচার এবং দাদন প্রথার শোষণে তাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল।  

দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটকের নীলচাষীদের অত্যাচারের কাহিনি জানা যায়। এই নাটকের ইংরাজি অনুবাদ করেছিলেন মাইকেল মধুসুদন দত্ত। সেসময়কার ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকা নীলচাষিদের অত্যাচারের কাহিনি বলিষ্ঠ কন্থে প্রকাশ করতেন।

এই বিদ্রোহের ফলস্বরূপ ১৮৬০ সালে “নীলকমিশন” গঠিত হয়। 

[৬] চট্টগ্রাম বিদ্রোহ

চট্টগ্রামের মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে  বিশ শতকের তিনের দশকে বিভিন্ন বিদ্রোহ সংগটিত হয়। যেমন, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন, ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ ইত্যাদি। বিদ্রোহের অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন নির্মল সেন, কলপনা দত্ত, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, অনন্ত সিংহ প্রমুখ। সুর্যসেন “ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি” গঠন করেছিলেন।  

[৭] নন্দীগ্রাম আন্দোলন

একবিংশ শতকের একটি গুরুত্বপূর্ণ হল নন্দীগ্রাম আন্দোলন। ২০০৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার চাষের জমি অধিগ্রহণ করে ”স্পেশাল ইকোনমিক জোনে” পরিণত করে, যেখানে কেমিক্যাল হাব বানানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল।  পুলিশি নির্যাতন ইত্যাদি কারণে নন্দীগ্রাম এর চাষিরা  আন্দোলন করে। যাইহোক আন্দোলনের চাপে পরে এখানে হাব হয় নি।

Next Post
No Comment
Add Comment
comment url